Pages

Tuesday, May 31, 2022

'আলাইহিস সালাম', 'কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু' বলা কি শিয়াদের চিহ্ন?

 

 আলাইহিস সালাম ব্যবহার করার পক্ষে অনেক দলিলাদি দেখা যায়।




নবীজি ﷺ এঁর নামের পর সালাত  সালাম প্রেরণের নির্দেশ আমরা কোরানুল করিম হতে পাই।⁽*⁾ এবং অন্যান্য আম্বিয়া عليهم السلام অনেক পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী  সম্মানিত ব্যক্তির নামের পর আমরা আলাইহিসসালাম ব্যবহার করে থাকি।

★তফসিরে কবিরের সূচিপত্রেই,সুরা ক্বাফ-হা-ইয়া-আইন-সোয়াদ এর ক্ষেত্রে সূরাতুল মারিয়াম আলাইহাসসালাম লেখা আছে।

★হযরত খিযর নবি/ওলি এর ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও,কেউ ওলি ভেবে উনার নামের পর রহিমাহুল্লাহ বলেন না,বরং আলাইহিসসালামই বলেন।

★ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম এর ব্যবহার সর্বজনবিদিত। 


কিন্তু কিছু কিছু কূপমন্ডুককে দেখা যায় তারা,নবী পরিবারের সদস্যদের শেষে আলাইহিসসালাম বলতে/লিখতে কাউকে দেখলেই তাদেরকে “রাফেযী” বা “শিয়া” বানিয়ে দেয়ার কাজটা অনায়াসে করে ফেলেন। যদিও কারো কথায় কারো ঈমান ও আক্বিদা/বিশ্বাসমালায় কিছু আসে যায় না।কেননা,মুহাব্বত,ঈমান আর আক্বিদার সত্যায়ন স্বয়ং মোস্তফা ﷺ করে থাকেন।


এরশাদ হচ্ছে—

سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ

অর্থঃ (আল্লাহর পক্ষ হতে) শান্তি বর্ষিত হোক ইলয়াসীন এর উপর।(সাফফাত-১৩০)


রইসুল মুফাসসিরীন সৈয়্যদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেন, এই আয়াতের প্রথম তাফসির হল—


سلام- منا سعادة وسلامة -على آل ياسين- على آل محمد عليه الصلاة والسلا


অর্থাৎঃ (রব্বে করীমের তরফ হতে) সা'আদাত বা নিরাপত্তা এবং সালামাত বা শান্তি বর্ষিত হৌক আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) বা নবিজির (ﷺ) পরিবার-পরিজনের এর উপর।

{★তানবীরুল মিক্ববাস ফি তাফসিরে ইবনে আব্বাস,সুরা সাফফাত এর তাফসির,আল্লামা মজিদুদ্দীন ফিরোজাবাদী. 

★আব্দুল্লা ইবনে মাসউদ রাঃ এর কেরাত অনুযায়ী,এটা সালামুন আলা আ-লে-ইয়াসীন।মানে নবীজির আ-ল বা পরিজনের উপর আল্লাহর সালামতি(সর্বদা বিরাজমান)।

(i)তাফসিরে আল কুরআন আল আজিম, হাফেজ এমাদুদ্দীন ইবনে কাসির।

(i)জামেউল বায়ান আন-তাবিলে আল-কুরআন,ঊনবিংশতিতম খন্ড,৬২২পৃষ্ঠা,ইমাম জারীর আত তাবারি

★আল্লামা মাওয়ারদী, 'আলে-ইয়াসীন' উল্লেখ করেছেন,তাফসিরে মাওয়ারদী,পঞ্চম খন্ড,৬৫পৃষ্ঠা

★তাফসিরে কুরত্বুবী,অষ্টাদশ খন্ড,৯০পৃষ্ঠা।

★তাফসিরে আবি হাতেম,হাদীস নং-১৮২৫৪

★তফসিরে কবির,ষষ্ঠবিংশতিতম খন্ড,১৬২পৃষ্ঠায়,এই আয়াতের দ্বিতীয় তাফসীর। 

★আল্লামা মুহিউসসুন্নাহ বাগাবী এই আয়াতের প্রথম তাফসিরেই বলেন,ইলয়াসীন দ্বারা,আলে মুহাম্মাদ ই উদ্দেশ্য।তাফসিরে বাগাবী।}


এই আয়াতের তাফসিরের ব্যাপার ইলিয়াস عليه السلام বা ইদরীস عليه السلام এর উপর সালাম,নাকি আলে ইয়াসিন ﷺ বা ইয়াসিনের ﷺ পরিবার বা নবীপাক ﷺ এর পরিবার এর উপর সালাম সে ব্যাপারে উভয় রকম মতামত বিদ্যমান। তবে পরিশেষে, আলে ইয়াসিন (ﷺ) এর জন্য এটা গ্রহনযোগ্য হবে।যেমন ইমাম তাবারী উল্লেখ করেন,সালামুন আলা আ-লে ইয়াসিন এটা মদীনার অনেক ক্বারী/তেলাওয়াতকারী উচ্চারণ করে থাকেন।

[★তাফসিরে তাবারী,ঊনবিংশতিতম খন্ড,৬২০পৃষ্ঠা

★এটা ক্বারী হযরত নাফি('য়) এবং ইবনে আমের আলাইহিমুর রহমাদ্বয়েরও ক্বেরাত।

(i)আল সাব'আত,৫৪৯পৃষ্ঠা,ইবনে মুজাহিদ রাঃ

(ii)তফসিরে জালালাইন বাংলা,টীকা অংশ।

 (iii)তফসিরে কবির,ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী।]


এই আয়াতের তাফসিরের শেষভাগে,ক্বালবীর সূত্রে,একই মত প্রকাশ করেছেন,আহলে হাদিস স্কলার কাযী শওক্বানী,উনার তফসিরে ফতহুল ক্বদীর গ্রন্থে। আর স্পষ্ট করে ইমাম সূয়ুতী বলেন, উচ্চারণ/ক্বেরাত যদি “আ-লে ইয়াসীন” হয় (যেমনটা তথ্যসূত্র-3 এ বলা),তখন এটা দ্বারা উদ্দেশ্য আলে মুহাম্মাদ।

[আল ইতকান ফি উলুমিল কোরআন,৫ম খন্ড,সম্মিলিত খন্ড ১৯৮১পৃষ্ঠা।]


অর্থাৎ,নবী পরিবারকে স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলা'মিন  সালাম দিয়ে উনাদেরকে রহমতে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।


➤বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে ,সৈয়্যদুনা আবি হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন,


 قَالَ أَتَى جِبْرِيْلُ النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذِهِ خَدِيْجَةُ قَدْ أَتَتْ مَعَهَا إِنَاءٌ فِيْهِ إِدَامٌ أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ فَإِذَا هِيَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلَامَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّيْ   .....


মানে,”জিব্রাঈল عليه السلام নবী ﷺ এঁর নিকট হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! ঐ যে খাদীজাহ رضي الله عنه একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাদ্যদ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌঁছে যাবেন তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন।“


এখানে স্পষ্ট দেখা যায়,আল্লাহর পক্ষ থেকে সালামের পবিত্র পয়গামখানি এবং নিজের সালাম দিচ্ছেন রুহুল কুদ্দুস আলাইহিসসালাম এভাবে — عَلَيْهَا السَّلَامَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّيْ — (আলাইহাস সালাম মির-রব্বিহী ওয়া মিন্নী)।

[৬৩নম্বর অধ্যায়,বাব-উ-মানাক্বিবিল আনসার, بَابُ تَزْوِيْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَدِيْجَةَ وَفَضْلِهَا رَضِيَ اللهُ عَنْهَا,#৩৮২০(ইন্টারন্যাশনাল)

]


➤আবার মুমিনদের আম্মাজান আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু নিজেই বর্ণনা করেন,


قَالَ أَبُوْ سَلَمَةَ إِنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا يَا عَائِشَ هَذَا جِبْرِيْلُ يُقْرِئُكِ السَّلَامَ فَقُلْتُ وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ تَرَى مَا لَا أَرَى تُرِيْدُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم


মানে,”তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে ‘আয়েশা! জিবরাঈল عَلَيْهِ السَّلَامُ তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি উত্তরে বললাম,❝ওয়া আলাইহিস্ সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আপনি (ﷺ) যা দেখতে পান আমি তা দেখতে পাই না।❞

মুমিনদের মাতাকে স্বয়ং রুহুল কুদ্দুস  সালাম দিয়েছেন।এই হাদিসটা আরো কয়েক স্থানে বর্ণিত আছে।

[আবি সালামাহ রাঃ এর সূত্রে আরো বর্ণনা এসেছে—(i)বুখারী শরিফ ,আদব অধ্যায়(৭৮) #৬২০২ এবং অনুমতি প্রার্থনা অধ্যায়(৭৯),#৬২৪৯

(ii)মুসলিম শরিফ, ফাযায়েলুস সাহাবা অধ্যায়,2447

(5997 int)

(iii)আল-মুজতাবা(নাসায়ী শরিফ), জুহরী হয়ে উরওয়ার বর্ণনা ,স্ত্রী লোকের সাথে ব্যবহার অধ্যায়,(كتاب عشرة النساء),# ৩৯৫৩,৩৯৫৪.

(iv)সুনানু আবি দাউদ, কিতাবুল আদব(৪৩), #৫২৩২

(v)জামে তিরমিযী,কিতাবুল মানাকিব(৪৯),#3882,3881

(int)

(vi)সুনানু ইবনে মাজাহ,কিতাবুল আদাব(৩৩),#৩৬৯৬]


আমরা এ হাদিসগুলোকে এখানে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছি কেননা,ইমাম বুখারী,মুসলিম এবং তিরমীযী এগুলোকে সরাসরি ফাযায়েলের অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন।আর আক্বায়েদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম'আর ওলামারা আলাইহিসসালাম এর ব্যবহার কেবল উচ্চ মর্যাদা বা ফজিলত বুঝাতে ব্যবহার করে থাকেন।রাফেযীদের মতো একে কেবলমাত্র দ্বাদশ ইমামের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেননা।


⬛ ইমাম বুখারী আলাইহিররাহমা উনার আল-জামি তে অনেক স্থানে আহলে বায়েতের নামের পর আলাইহিস/আলাইহাসসালাম ব্যবহার করেছেন।

যেমনঃ সৈয়্যদায়ে কায়েনাত ফাতেমাতুযযাহারা كرم الله تبارك وتعالى وجهها الكريم - এর ফজিলত বুখারী শরিফে একই অধ্যায়ে দুইবার দুই শিরোনামে আলোচিত হয়েছে।


দ্বাদশ পরিচ্ছদের নাম এরূপ-


بَابُ مَنَاقِبُ قَرَابَةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَمَنْقَبَةِ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلاَمُ بِنْتِ النَّبِيِّ ﷺ


বা,রসুলুল্লাহ এর নিকটাত্মীয়দের পরিচ্ছদ এবং ফাতেমা আলাইহাসসালাম বিনতে নবী(ﷺ) এর জীবনাদর্শের পরিচ্ছদ।


আর এর প্রথম হাদিসটা বর্ণনা করছেন আম্মাজান আয়েশা আলাইহাসসালাম,

....  عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ فَاطِمَةَ ـ عَلَيْهَا السَّلاَمُ


মানে, আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে,ফাতেমা আলাইহাসসালাম..……


⬛ আবার একই অধ্যায়ে ঊনবিংশতিতম পরিচ্ছদে  উল্লেখ আছে একই শব্দগুলো,


 باب مَنَاقِبُ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلاَمُ


 

⬛একই অধ্যায়ে,দ্বাবিশতিতম পরিচ্ছদে আছে,


......  عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أُتِيَ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ زِيَادٍ بِرَأْسِ الْحُسَيْنِ ـ عَلَيْهِ السَّلاَمُ


মানে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদের সামনে হুসাইন আলাইহিসসালাম -এর মাথা (মোবারক) আনা হল...........


⬛ ইমাম বুখারি রহঃ ইমাম সাজ্জাদ আল যাইনুল আবিদীন আলী ইবনে হুসাইন এর নামের পর আলাইহিসসালাম ব্যবহার করেছেন। বিবাহ অধ্যায়ের মধ্যে উল্লেখ আছে,

لِقَوْلِهِ تَعَالَى: مَثْنَى وَثُلاَثَ وَرُبَاعَ

وَقَالَ عَلِيُّ بْنُ الْحُسَيْنِ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ يَعْنِي مَثْنَى أَوْ ثُلاَثَ أَوْ رُبَاعَ

মানে, আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘তোমরা বিয়ে কর দু’জন, তিনজন অথবা চারজন।’’ (সূরা নিসা-২)

আলী ইবনু হুসায়ন আলাইহিসসালাম (এ আয়াতের তাফসিরে) বলেনঃ আয়াতটির অর্থ হচ্ছে দু’জন অথবা তিনজন অথবা চারজন।

বুখারী,কিতাবুন নিকাহ, باب لاَ يَتَزَوَّجُ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعٍ, #৫০৯৮ এর আগের অংশ।


শুধু তাই নয়,সৈয়্যদুনা সিদ্দিকে আকবর এবং সৈয়্যদুনা ফারুকে আযম এর নামের পর ইমাম দারাকুতনী রহঃ আলাইহিসসালাম ব্যবহার করেছেন।

ফাদ্বায়িলুসসাহাবাতি ওয়া-মানাক্বিবাহুম,ইমাম হাফেজ আবুল হাসান আলী ইবনে উমর দারাকুতনী রাঃ(৩৭৫ হিজরী)।









তাই আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জাম'আ উম্মুল মু'মিনিনদের নামের পর যেমন আলাইহাসসালাম ব্যবহার করে থাকেন,তেমনি আহলে বায়েতে আতহারের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন আবার খুলাফায়ে রাশেদুনের বেলায় ব্যবহার করতেও তাতে আপত্তি করেন না।ওয়াল্লাহু আ'লাম।


শায়খ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে আযম দেহলভি রাহ. এর ফতোয়া:


ত্রয়োদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ শায়খুল ইসলামি ওয়াল মুসলিমিন সনদুল মুহাদ্দিসিন ওয়া মুহাক্কিকীন ইমাম আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে আযমে দেহলভি নাওয়ারাল্লহু মারকাদাহ এর ফতোয়ার পুরান প্রিন্ট,যেটা আই থিঙ্ক মুফতি সাব চোখেও দেখেন নাই,সেই ১৩শ হিজরির শুরুর দিকের ছাপা,তার সূচিতেই একটা অধ্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে ❝আলি,ফাতেমা,হাসান ও হোসাইন এর নামের পর আলাইহিস সালাম লেখার বৈধ হবার প্রসংগে আলোচনা'!❞



ফতোয়া আযিযি ১২০ বছর আগের ফারসী প্রিন্ট



❝..আর 'আলাইহিস সালাম' শব্দটা গায়রে-নবি বা নবি নয় এমন কেউ(তবে সাহাবি),তার শানে ব্যবহার বলতে পারবে।এর দলিল/সনদ/মূলাধার হল আহলে সুন্নতের প্রাচীন হাদিসের গ্রন্থসমূহে,বিশেষত সুনানে আবি দাউদ এবং সহিহ বুখারিতে সাইয়্যিদুনা আলী,হাসানাইন,সাইয়্যেদা পাক ফাতেমা,আম্মাজান খাদিজাহ আর সাইয়্যিদুনা আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম দের পবিত্র আলোচনায় 'আলাইহিস সালাম' শব্দের ব্যবহার হয়েছে।কিন্তু শিয়াদের সাথে সাদৃশ্যের কারণে কিছু কিছু ওলামা এটা লিখতে মানা করেন!❞


আরো কিছু প্রমাণ আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি:

➤১।ইমাম আব্দুর রহমান ইবনুল জওযী হাম্বলি (৫৯৮হি.)।কিতাবুল মাওযুয়াত।মাক্তাবাতুস সালাফিয়াহ,মদীনাতুল মুনাওয়ারা হতে প্রকাশিত।


১ম খন্ডে আলী,ফাতিমা,হাসান, হোসাইন রাঃ এর নামের পর আলাইহিস সালাম সহকারে বাব/পরিচ্ছদ রচনা করেছেন।


➤২।ইমাম দারাকুৎনী(৩৮৫ হি.)।ফাযায়েলুস সাহাবা ওয়ামানাকিবুহুম।মাক্তাবাতু গুরাবাইল আছারিয়াহ।

অনেক জায়য়গায় আলাইহিসসালাম ব্যবহার করেছেন যেমন ২৯ পৃষ্ঠা।


➤৩।ইমাম আহমদ বিন হাম্বল।ফাযায়েলুস সাহাবা।


সম্পূর্ণ অধ্যায়েরই এর নামই দিয়েছেন 'ফাযায়েলে আলী আলাইহিস সালাম'।


➤৪।তিরমিযী শরিফ,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ বৈরুত,সম্পূর্ণ বাব এর নাম বাব মানাকিবে হাসান ওয়া হুসাইন আলাইহিমুস সালাম।


➤৫।সুনানে আবি দাউদ,১৫৭৯ নং হাদীস


حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَوْنٍ أَخْبَرَنَا أَبُو عَوَانَةَ عَنْ أَبِي إِسْحَقَ عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ عَنْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَام قَالَ قَالَ  ......... 


➤৬।মুসনাদু আহমদ বিন হাম্বল,৯২৬৫


.....   

كَانَ مَرْوَانُ يَسْتَخْلِفُ أَبَا هُرَيْرَةَ عَلَى الْمَدِينَةِ فَاسْتَخْلَفَهُ مَرَّةً فَصَلَّى الْجُمُعَةَ فَقَرَأَ سُورَةَ الْجُمُعَةِ وَإِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ فَلَمَّا انْصَرَفَ مَشَيْتُ إِلَى جَنْبِهِ فَقُلْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ قَرَأْتَ بِسُورَتَيْنِ قَرَأَ بِهِمَا عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَام قَالَ قَرَأَ بِهِمَ  

....

......


➤৭।তফসিরে কবির,ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী,২/৩৭৮ মাক্তাবা শামেলা,


وَقَالَ قَوْمٌ: إِنَّهَا نَزَلَتْ فِي عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ   .......


➤৮।আল্লামা আবুল হাসান ওয়াসেতী বা ইমাম ইবনে মাগাযেলী (৪৮৩হিজরী), মানাকিবে আমিরুল মুমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব রাঃ,৩০৫ নং হাদীস।দারুল আছার,ইয়েমেন।


➤৯।তফসিরে কাশশাফ,আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশারী(৫৩৮হি.) ,২/২৯৫,


قال علىّ بن أبى طالب عليه السلام:لَأَصْبَحَنَّ الْعَاصِ وَابْنَ الْعَاصِى  ...... 

মাক্তাবা শামেলা।


➤১০।তফসিরে মাযহারী,আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ উসমানী আল-মাযহারী আল-পানিপথী আল-নখশবন্দী আল-হানাফি (১১৬৫হি.)

,৩/২৮৯


ما روى الحاكم عن صعصعة بن صوحان عن علي عليه السلام انه عليه السلام لما استشهد وضربه ابن ملجم قال الناس يا امير المؤمنين


➤১১।ইমাম আবু আব্দুল্লাহ কুরতুবী (৬৭১হি.) তফসিরে ক্বুরতুবী,১৫/১৯৮পৃষ্ঠা


قُلْتُ: وَضَعَّفَ أَبُو الْفَرْجِ ابْنُ الْجَوْزِيِّ هَذَا الْحَدِيثَ فَقَالَ: وَغُلُوُّ الرَّافِضَةِ فِي حُبِّ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ


➤১২।ইমাম আবু জাফর জারির আত-তাবারী (৩১০ হি.),তফসিরে ত্বাবারী,১৩/১৬৬, #১৫১৯৯ নং হাদীস


قال، حدثنا أبي، عن شريك، عن جابر، عن عبد الله بن يحيى، عن علي عليه السلام قال: إنما سميت "اليهود"، لأنهم قالوا: "هدنا إليك  .....

 

➤১৩।শায়খুল ইসলাম যাহিদ ইবনে হাসান আল কাউসারী (১৩৭১হি.) ,'আল হাভী ফি সিরাত আত ত্বাহাভী' গ্রন্থের ৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন


وتبدو على كلامه آثار بغضه لعلي عليه السلام في كل خطوة من خطوات تحدثه  ...... 


➤১৪।কাযী আবু আব্দুল্লাহ আল-কাদ্বায়ী শাফেয়ী(৪৫৪ হি), মুসনাদু শিহাব,ইমাম কাদ্বায়ী,১/৪


عن إسحاق بن إبراهيم الشامي قال: أخبرنا علي بن حرب قال: أخبرنا موسى بن داود الهاشمي قال: أخبرنا ابن لهيعة عن محمد بن عبد الرحمن بن نوفل عن عامر بن عبد الله بن الزبير عن أبيه عن علي عليه السلام  .........


➤১৫।আল ইস্তিয়াব,ইমাম ইবনে আব্দিল বার মালেকী(৪৬৩হি.) ,৩/১১৩১পৃষ্ঠা


وقال قَاسِم بْن ثَابِت صاحب كتاب الدلائل: أنشدني مُحَمَّد بْن عَبْد السَّلامِ الحسيني فِي قتل علي عليه السلام


➤১৬।ইমাম ইবনে আব্দিল বার,জামেউল বায়ানুল ইলম ওয়া ফাযলিহী,১/৪৪৮,৭৭৪ নং হাদীস,


وَمِنْ حَدِيثِ أَبِي رَافِعٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ .........

➤১৭।বাহজাতুল মাজালিস,ইমাম ইবনে আব্দিল বার,২৪৩ পৃষ্ঠা,

سئل علي عليه السلام: من الزاهد في الدنيا؟ قال: من لم ينس المقابر والبلى وترك فضل زينة الدنيا ....  


➤১৮।ইমাম বুখারী,তারিখুল কাবির,২/৩৫৫,ক্রমিক ২৭৩১

قَالَ: صمنا على عهد علي عَلَيْهِ السَّلَامُ ثمانية وعشرين يوما فأمرنا .........


➤১৯।সুনানু কুবরা লিন নাসায়ী,১/৩৩,১০৯৭৯ নং হাদীস,


  أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا عِيسَى، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ مُسْلِمٍ، عَنْ شُتَيْرِ بْنِ شَكَلٍ، عَنْ عَلِيٍّ، عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ ......

➤২০।ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী,হিলইয়াতুল আউলিয়া(৪৩০হি.) ,১/৭৫


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْمَاعِيلَ الطُّوسِيُّ، وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ إِسْحَاقَ، قَالَا: ثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ خُزَيْمَةَ، ثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، ثَنَا يُوسُفُ بْنُ زِيَادٍ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ أَبِي الْمَشَدِّ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ، قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ:. .......


➤২১।মুজামুল কাবির লিত ত্বাবারানি,২২/৪১৩

مَا أَسْنَدَتْ فَاطِمَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ، عَنْ فَاطِمَةَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ ........... 


➤২২।মুসান্নাফে আব্দির রায্যাক,৫/১৯৫


9362 - عَنْ عُثْمَانَ بْنِ مَطَرٍ، وَابْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ قَتَادَةَ: أَنَّ مُكَاتِبًا أَسَرَهُ الْعَدُوُّ، ثُمَّ اشْتَرَاهُ رَجُلٌ، فَسَأَلَ بَكْرِ بْنِ قِرْوَاشٍ عَنْهُ عَلِيًّا، فَقَالَ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ: «قُلْ فِيهَا يَا بَكْرَ بْنَ قِرْوَاشٍ ...........


➤২৩।ইমাম শাহিন স্বীয় তারগীব গ্রন্থের ৪২ পৃষ্ঠায় হযরত আব্বাস রাঃ এর নামের পর আঃ লিখেছেন—


فَضْلُ صَلَاةِ التَّسْبِيحِ الَّذِي عَلَّمَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمِّهِ الْعَبَّاسِ عَلَيْهِ السَّلَامُ


➤২৪।ইমাম ইবনে শাহিন,শরহে মাযহাবে আহলুস সুন্নাহ,২৬৩ পৃষ্ঠার ১৬৯ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে,হাসান আলাইহিস সালাম


وَلَمْ يُطْلِقِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السُّؤْدَدَ فِي الصَّحَابَةِ إِلَّا لِلْحَسَنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ .......


➤২৫।একই গ্রন্থে উনার আব্বাজানকেও আলাইহিসসালাম সহকারে আলাদা বাব রচনা করা হয়েছে—


ذِكْرُ مَا تَفَرَّدَ بِهِ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ .....


➤২৬।ইমাম শাহিন (৩৮৫হি.) ,ফাযায়েলে ফাতেমা গ্রন্থের স্থানে স্থানে ফাতেমার পর আলাইহাস সালাম লিখেছেন,যেমন 17 পৃষ্ঠা,১ নং হাদীস


صَنَعَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَانْتَزَعَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ سِلْسِلَةً مِنْ ذهب من عُنُقِهَا فَقَالَتْ: هَذِهِ أَهْدَاهَا لِي أَبُو حَسَنٍ ....... 


➤২৭।ঐ একই গ্রন্থে উল্লেখ আছে,আলী আলাইহিস সালাম 

29-[30] حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سُلَيْمَانَ بْنِ الْأَشْعَثَ، ثنا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ، ثنا سُفْيَانُ، عَنِ ابْنِ أَبِي نَجِيحٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَجُلًا، سَمِعَ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى مِنْبَرِ الْكُوفَةِ يَقُولُ: أَرَدْتُ أَنْ أَخْطُبَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ابْنَتَهُ ثُمَّ .......


➤২৮।সুনান আদ দারাকুৎনী,১/৯২,২৮৯ নং হাদীস

نَا جَعْفَرُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْوَاسِطِيُّ ، نَا مُوسَى بْنُ إِسْحَاقَ ، نَا أَبُو بَكْرٍ ، نَا مُعْتَمِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، عَنْ عَوْفٍ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ هِنْدٍ قَالَ : قَالَ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ : مَا أُبَالِي إِذَا أَتْمَمْتُ وُضُوئِي بِأَيِّ أَعْضَائِي بَدَأْتُ .......... 


➤২৯।ত্বাবাকাতুশ শাফেইয়াহ,৬/১১৭ ইমাম তাজুদ্দিন সুবুকি,

وَقَالَ أَنا مُحَمَّد ابْن عبد الله وسرد لَهُ نسبا إِلَى عَليّ عَلَيْهِ السَّلَام وَصرح بِدَعْوَى الْعِصْمَة لنَفسِهِ وَأَنه الْمهْدي الْمَعْصُوم وَبسط يَده للمبايعة فَبَايعُوهُ ...........


➤৩০।মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন, ৩/১৬৬,

4728 - أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَتَّابٍ الْعَبْدِيُّ، بِبَغْدَادَ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي دَارِمٍ الْحَافِظُ ،....... عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ، عَنْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ


আলাইহিসসালাম ব্যবহার নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।এটাকে শিয়া-সুন্নির মানদণ্ড ভাবাটা বেইনসাফি হবে।



আর হযরত আলি রা এর নামের পর কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু শব্দের ব্যবহার এত বেশি যে, যে লোক এটার বিরোধিতা করে সে আসলে খারেজী মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই লালন করেনা। কতেক দেওবন্দি আপত্তি করে,যা তাদের অজ্ঞতা। তাদের শ্রদ্ধাভাজন সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলি নদভী হযরত আলির জীবনী লিখতে গিয়ে কিতাবের নামের মধ্যেই كَـرَّم اَلـلَّـهُ  وَجْهَـهُ  ব্যবহার করেছেন। এছাড়া জামেয়া বিনূরীয়ার ফতোয়ায় ও তারা এটা ব্যবহার করেছে। দেখতে এখানে ক্লিক করুন।


'মাওলা আলি' বলা কি শিয়াদের লক্ষণ?

 

 হযরত আলি كَـرَّم اَلـلَّـهُ تَبَـارَكْ وَتـَعٰالى وَجْهَـهُ الْكَـرِيْـمُ এর পবিত্র নামের পূর্বে 'মাওলা' ব্যবহার করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম'আহর একটা অন্যতম নিদর্শন। আহলে বায়তের অন্যতম প্রধান সদস্যকে 'মাওলাইয়ত' প্রদান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ ﷻ, তাঁর রাসুল ﷺ এবং এর সত্যায়ন করেছেন সাহাবীরা ।


Mazar Of Imam Hussain عليه السلام



অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি দেখবেন, যারা এ উপাধীটি ব্যবহারের বেলায় বিরোধিতা করেন তাদের নামের পূর্বে তারা নিজেই 'মাওলানা' বা 'আমাদের মাওলা' লিখে রেখেছেন। দেওবন্দিদের আলেমরা খুব ঘটা করেই নিজেদের আকাবিরের সাথে 'মাওলানা' লাগান অথচ অনেকে হযরত আলি رضي الله عنه এর বেলায় আপত্তি তোলেন। তখন উনাদের মনে প্রশ্নের অবতারণা হয়না। তখন বলেন এখানে আমরা 'মাওলানা' দিয়ে বন্ধু,নেতা এসব বুঝিয়েছি! শিয়াদের মতো শিরক বুঝাইনি। এখন সেটাই আমাদের জবাব যে হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু কে আহ্লুস সুন্নাহর অনুসারীরা 'নেতা', 'অভিভাবক' এবং 'সাহায্যকারী' হিসেবেই 'মাওলা' নামে আখ্যায়িত করে।


ক্বুরআনুল কারীম স্বয়ং হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু কে 'সাহায্যকারী' অর্থে মাওলা ঘোষণা করেছে। সুরা তাহরিমের চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন,

فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ ۖ...

অর্থ: অবশ্যই আল্লাহ হলেন তাঁর (ﷺ) সাহায্যকারি/মাওলা , এবং জিবরিল عليه السلام ও নেক ইমানওয়ালারাও তার মাওলা/সাহায্যকারি।[

তরজমা: কানযুল ইমান। আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রিদ্বা আলি খান মুহাদ্দিসে বেরেলভি রহ.]


বিখ্যাত তাফসিরে জালালাইন গ্রন্থে উল্লেখ আছে,{

مولاه - ناصره 

— মাওলাহু অর্থাৎ তাঁর ﷺ সাহায্যকারী!


'শরহুশ শিফা' গ্রন্থে হাফিয মোল্লা আলি ক্বারি লিখেছেন,

{فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ}

 الآية {مَوْلَاهُ} أي وليه يعني ناصره ومتوليه فيما أولاه

— [নিশ্চয়ই আল্লাহ হলেন মাওলা] আয়াতের (ব্যাখ্যায় কাযি আয়ায বলেন) মাওলা মানে বন্ধু/ওয়ালি । অর্থাৎ (মোল্লা আলি ক্বারি বলেন), মাওলা মানে সাহায্যকারি এবং আল্লাহ উনার ﷺ সাহায্য করবেন যেরূপ আগেও করে এসেছেন।


ইমাম শিহাবউদ্দিন সাইয়্যেদ মাহমুদ আলুসিও 'তফসিরে রূহুল মাআনি' গ্রন্থে 'মাওলা' এর অর্থ 'নাসির' বা সাহায্যকারি নিয়েছেন।


সুতরাং বলা চলে আল্লাহ ﷻ খুলাফায়ে রাশেদুনকে 'মাওলা' ঘোষণা করেছেন কেননা,এই আয়াতে 'নেক ইমানদার' বলতে খুলাফায়ে রাশিদুনকে বুঝানো হয়েছে। পাশাপাশি হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর বিশেষ অন্তর্ভুক্তি কয়েকটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়।


তাফসিরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ আছে,(৮/১৮৭ DK)


 قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلّم في قوله تعالى: وَصالِحُ الْمُؤْمِنِينَ قَالَ: «هُوَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ


হাফিয ইবনু হাজার বলেন,


وَأَخْرَجَهُ الطَّبَرِيُّ بِسَنَدٍ ضَعِيفٍ عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ هُوَ عَلي وَأخرجه بن مَرْدَوَيْهِ بِسَنَدَيْنِ ضَعِيفَيْنِ مِنْ حَدِيثِ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ مَرْفُوعًا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ صَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ وَمَنْ طَرِيقِ أَبِي مَالِكٍ عَن بن عَبَّاسٍ مِثْلَهُ مَوْقُوفًا وَفِي سَنَدِهِ رَاوٍ ضَعِيفٌ وَذكره النقاش عَن بن عَبَّاسٍ وَمُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ الْبَاقِرِ وَابْنِهِ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ الصَّادِقِ 


এই আয়াতে 'নেক ইমানদার' দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত আলি রা. এরকম হাদিস বর্ণণা করেছেন

১. ইবনু আবি হাতিম, দূর্বল সনদে হযরত আলি রা. হতে

২.ইমাম তাবারি, দূর্বল সনদে মুজাহিদ হতে

৩.ইমাম ইবনু মারদাওয়াইয়াহ দুইটি দুর্বল সূত্রে হযরত আসমা বিনতে উমাইস হতে

৪.আবু মালিকের সূত্রে হযরত ইবনু আব্বাস রা. হতে

৫. নাক্কাশ বর্ণনা করেছেন স্বীয় সনদে ইবনু আব্বাস রা. হতে

৬. এবং নাক্কাশ হযরত ইমাম বাকির রা. ও ইমাম জা'ফর সাদিক্ব রা. হতে বর্ণনা করেছেন।

(ফতহুল বারী, ১০/৪২২ দারুল মা'আরিফাহ)


হাফেয ইবনু কাসির '১' নং বর্ণনাটি উল্লেখ করে অত্যন্ত দ্বইফ এবং মুনকার ঘোষণা করেছেন বটে কিন্তু উনার বক্তব্য বাকি সাত-সাতটি সনদ দ্বারা নাকচ হয়। হাফিয ইবনু হাজারও এর বিরোধিতা করেন নি।


এই গেলো ক্বুরআন হতে সত্যায়ন। এরপর নবিজি ﷺ গাদীরে খুমে হযরত আলি রা. এর মুবারক হাত উঁচু করে তুলে ঘোষণা করেছেন। মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদিসে এসেছে নবি ﷺ বলেছেন ❝আমি যার মাওলা,আলি তার মাওলা।❞


এর যেসব অর্থ আহলুস সুন্নাহ গ্রহণ করে তা হলো

১।❝আমি যার বন্ধু,আলি তার বন্ধু।❞

২।❝আমি যার অভিভাবক,আলি তার অভিভাবক।❞

৩।❝আমি যার নেতা,আলি তার নেতা।❞

৪।❝আমি যার সাহায্যকারি,আলি তার সাহায্যকারি।❞

৫।❝আমি যার অতিনিকটভাজন,আলি তার অতিনিকটভাজন।❞

এর মধ্যে ৪ নম্বর টা নিয়ে অনেক দেওবন্দি বা বাতিলের সমস্যা থাকতে পারে। এসব ব্যাপারে বহু আগে আলোচনা করা হয়েছে। টীকা ১ দেখে নেওয়া যেতে পারে।

টীকা ১।সাহায্য প্রার্থনার বিধান

হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে:—

১। হযরত ইবনে আব্বাস হতে, ইমাম হাকিম নিশাপুরীর 'মুস্তাদরাক' গ্রন্থে, ৩/১৩৪, ৪৬৫২নং হা.

২। হযরত জাবির হতে, ইমাম ইবনে আবি শায়বাহর 'আল-মুসান্নাফ' গ্রন্থে, ১২/৫৯

৩। হযরত আবু আইয়ুব আনসারি হতে, ইমাম তাবারানির 'মুজামুল কাবির' এর ৪/১৭৩ পৃ.


حَدَّثَنَا عُبَيْدُ بْنُ غَنَّامٍ، ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، ح وَحَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْحَاقَ التُّسْتَرِيُّ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَا: ثنا شَرِيكٌ، عَنْ حَنَشِ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ رِيَاحِ بْنِ الْحَارِثِ، قَالَ: بَيْنَا عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ جَالِسٌ فِي الرَّحَبَةِ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ وَعَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا مَوْلَايَ، فَقِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: أَبُو أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيُّ، فَقَالَ: أَبُو أَيُّوبَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ

৪। হযরত বোরাইদাহ হতে, ইমাম আব্দির রাযযাক সান'আনি, ১১/২২৫ পৃ.

৫। হযরত হুবসা বিন জুনাদাহ, ইমাম ইবনু আসেম 'আস-সুন্নাহ' ৬০২পৃ.

৬। হযরত সা'দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস হতে, তারিখে দামেষ্ক গ্রন্থে, ২০/১১৪ পৃ.


৭। বারা ইবনু আযিব রা. হতে ইমাম আহমদ সংকলন করেছেন, 'ফাযাইলুস সাহাবা' ১০১৬ নং হাদিস


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي، نا عَفَّانُ قال: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ قَالَ: أنا عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ فَنَزَلْنَا بِغَدِيرِ خُمٍّ، فَنُودِيَ فِينَا: الصَّلَاةُ جَامِعَةٌ، وَكُسِحَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحْتَ شَجَرَتَيْنِ، فَصَلَّى الظُّهْرَ وَأَخَذَ بِيَدِ عَلِيٍّ فَقَالَ: «أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ؟» قَالُوا: بَلَى، قَالَ: «أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ؟» قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَأَخَذَ بِيَدِ عَلِيٍّ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ، اللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالِاهُ، وَعَادِ مَنْ عَادَاهُ»، قَالَ: فَلَقِيَهُ عُمَرُ بَعْدَ ذَلِكَ فَقَالَ: هَنِيئًا لَكَ يَا ابْنَ أَبِي طَالِبٍ، أَصْبَحْتَ وَأَمْسَيْتَ مَوْلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ وَمُؤْمِنَةٍ ''.(رقم الحديث: ١٠١٦، فضائل علي رضي الله عنه ، ٢/ ٥٩٦،ط: مؤسسة الرسالة بيروت


৯। মাওলা উসামা ইবনু যায়দ হতে বর্ণিত,

شرح أصول اعتقاد أهل السنة و الجماعة"میں ہے:


'' أنا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: أنا الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ: نا مُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ، قَالَ: نا زَكَرِيَّا بْنُ عَدِيٍّ، قَالَ: نا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ، قَالَ: نا هِلَالُ بْنُ مَيْمُونٍ الرَّمْلِيُّ، قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي بِسْطَامٍ مَوْلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ: أَرَأَيْتَ قَوْلَ النَّاسِ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ» ؟ قَالَ: نَعَمْ، وَقَعَ بَيْنَ أُسَامَةَ وَبَيْنَ عَلِيٍّ تَنَازُعٌ، قَالَ: فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ: فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: «يَا عَلِيُّ، يَقُولُ هَذَا لِأُسَامَةَ، فَوَاللَّهِ إِنِّي لَأُحِبُّهُ» . وَقَالَ لِأُسَامَةَ: «يَا أُسَامَةُ، يَقُولُ هَذَا لِعَلِيٍّ، فَمَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ»''. (رقم الحديث: ٢٦٤٠، ٨/ ١٤٥٩، ط: دار طيبة)


সহ আরো অগণিত গ্রন্থের মধ্যে আলাদা আলাদা সনদে।



হযরত আলি كَـرَّم اَلـلَّـهُ تَبَـارَكْ وَتـَعٰالى وَجْهَـهُ الْكَـرِيْـمُ এর 'মাওলাইয়ত' প্রাপ্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাইয়্যিদুনা আমিরুল মু'মিনিন উমর ফারুক্ব عليه السلام. হাদিসে এসেছে, উনি বলেন

أصبحت مولاي ومولى كل مؤمن ومؤمنة

—❝আজ থেকে আপনি আমারও মাওলা হয়ে গেলেন। আপনি প্রত্যেক মু'মিন নর-নারীর মাওলা!❞


এটি বর্ণিত হয়েছে

১।হযরত আবু হুরাইরা হতে খতিবে বাগদাদি 'তারিখে বাগদাদ', ৮/২৯০পৃষ্ঠায় এনেছেন

২।হযরত আবু হুরাইরা হতে হাফিয ইবনু আসাকির 'তারিখে দামেষ্ক' গ্রন্থে ৪৫/১৭৬ পৃ.

৩।হযরত আবু হুরাইরা হতে হাফিয ইবনু কাসির 'আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া' ৫/৪৬৪

৪।হযরত আবু সাইদ খুদরি হতে ইমাম তাবারানি 'মুজামুল আওসাত' এর ৩/২২৪পৃ. উল্লেখ করেছেন

৫। এভাবে বারা' ইবনু আযিব, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং ইমাম যাইনুল আবিদিন হতেও অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে

৬। জুরজানি (৪৯৯হি.), কিতাবুল আমালি, ১২১২ নং হাদিস


সুতরাং বুঝা গেলো হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু কে 'মাওলা' বলে সম্বোধন করাটা রাসুলে পাক ﷺ এঁর সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত।


দেওবন্দিদের অন্যতম মারকায জামেয়াতুল উলুম ইসলামিয়া বিনূরি পাকিস্তান এর অফিশিয়াল ফতোয়ায়ও যেসব অর্থে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম'আহ হযরত আলিকে 'মাওলা' বলে সেগুলো জায়েয বলে ফতোয়া দিয়েছে।

যেমন ফতোয়া নং 143909201315 এ উল্লেখ আছে

رسولِ اکرم صلی اللہ علیہ وسلم نے حضرت علی کرم اللہ وجہہ کے لیے "مولا" کا لفظ محب، دوست اور محبوب کے معنی میں استعمال فرمایا ہے، اور یہی معنی صحابہ کرام رضوان اللہ علیہم اجمعین نے سمجھا تھا؛ لہذا حضرت علی کرم اللہ وجہہ کے لیے "مولا" کا لفظ اسی معنی میں استعمال
کرنا چاہیے

— ❝রাসুল ﷺ হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর ব্যাপারে 'মাওলা' শব্দকে 'প্রিয়তম','প্রিয়ভাজন' এবং 'বন্ধু' হিসেবে প্রয়োগ করেছেন। এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. গণও এই অর্থ নিয়েছেন। একারণে হযরত আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর ব্যাপারে 'মাওলা' শব্দের ব্যবহার এসব অর্থে হওয়া চাই।❞


مولیٰ کا ایک معنی سردار بھی آتاہے، اس معنی کے اعتبار سے بھی "مولا علی" کہنا جائز ہوگا


— 'মাওলা' শব্দের এক অর্থ 'নেতা' ও হয়। এই অর্থে 'মাওলা আলি' বলা জায়েজ! 


সুতরাং বুঝা গেলো 'মাওলা আলী' বলাটা সবক্ষেত্রেই নাজাইয নয়। এটা আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারীদের অন্যতম একটা নিদর্শন বটে!