আল্লাহ বলেন, ‘‘বল, তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দ হওয়ার আশংকা তোমরা করছ, এবং সে বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তার পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত।’’ [আত-তাওবাহ: ২৪] ইমাম বুখারী রাহেমাহুল্লাহ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘শপথ ঐ সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তান হতে অধিকতর প্রিয় হব।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষ হতে প্রিয়তম না হই।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮] উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ না করলে ঈমানদার বলে কেউ বিবেচিত হবে না। অতএব ঈমানের অনিবার্য দাবী হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা।আল্লাহ বলেন, ‘‘রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।’’ [সূরা আল হাশরঃ ৭]
আল্লাহ বলেন, ‘‘বল, তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দ হওয়ার আশংকা তোমরা করছ, এবং সে বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তার পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত।’’ [আত-তাওবাহ: ২৪]
ইমাম বুখারী রাহেমাহুল্লাহ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘শপথ ঐ সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তান হতে অধিকতর প্রিয় হব।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষ হতে প্রিয়তম না হই।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮] উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ না করলে ঈমানদার বলে কেউ বিবেচিত হবে না। অতএব ঈমানের অনিবার্য দাবী হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা।
আল্লাহ বলেন, ‘‘রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।’’ [সূরা আল হাশরঃ ৭]
আল্লাহ বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেকরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না।’’ [সূরা হুজুরাতঃ ২]রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও দরূদ পাঠ না করার পরিনতিঃ
আল্লাহ বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেকরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না।’’ [সূরা হুজুরাতঃ ২]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও দরূদ পাঠ না করার পরিনতিঃ
তিরমিযীর একটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধুসরিত হোক যার কাছে আমার উলেস্নখ করা হয় কিন্তু সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’’ তিরমিযী অন্য আরেকটি বর্ণনায় তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’’
তিরমিযীর একটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধুসরিত হোক যার কাছে আমার উলেস্নখ করা হয় কিন্তু সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’’
তিরমিযী অন্য আরেকটি বর্ণনায় তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’’
ইসলামী শরী‘আত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যেভাবে ভালোবাসার নির্দেশনা আমাদেরকে দিয়েছে নিম্নে আমরা সে বিষয়টি তুলে ধরছিঃ
১. সকল মানবের উপর রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়াঃ সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ ইসমাঈলের সন্তান থেকে কিনানাকে চয়ন করেছেন এবং কিনানা থেকে কুরাইশকে নির্বাচন করেচেন। আর কুরাইশ থেকে চয়ন করেছেন বনু হাশিমকে এবং আমাকে চয়ন করেছেন বনু হাশিম থেকে।’’[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭৭] সহীহ মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি আদম সন্তানের নেতা এবং এতে কোন অহংকার নেই। আর আমি ঐ ব্যক্তি প্রথম যার কবর বিদীর্ণ হবে, প্রথম যিনি শাফা‘আতকারী হবে এবং প্রথম যার শাফা‘আত কবুল করা হবে।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের আকীদা, মনে-মগজে ধারণ করার অর্থই হল তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্ভ্রম পোষণ করা এবং তাকে যাবতীয় সম্মান ও মর্যাদা দেয়া।২. সকল ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আদব ও শিষ্টাচার রক্ষা করাঃ নিম্ন বর্ণিত রূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচার রক্ষা করা যায়।ক. আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর উপর সালাত পেশ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার উপর সালাত ও সালাম পেশ কর।’’[সূরা আহযাবঃ ৫৬] খ. আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা একে অপরকে যেভাবে ডাক, রাসূলকে তোমাদের মধ্যে সেভাবে আহবান করো না।’’ [সূরা নূরঃ ৬৩]৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে প্রতিপন্ন করাঃ তাঁর সত্যতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘‘শপথ তারকার, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভ্রষ্ট হননি এবং বিভ্রান্তও হননি। তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করেননি। এতো শুধুই ওহী, যা তাঁর কাছে প্রেরিত হয়।’’ (সূরা নাজমঃ ১-৪)আল্লাহ বলেন, ‘‘আর এ কুরআন তো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো থেকে রচিত নয়, বরং এ হচ্ছে তার পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং সে গ্রন্থের বিশদ বিবরণ যা রাববুল আলামীনের পক্ষ থেকে সন্দেহাতীতভাবে অবতীর্ণ। তারা কি বলে যে, সে তা রচনা করেছে? বল, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে এস এবং তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। বরং যে জ্ঞান তাদের আয়ত্বে নেই সে সম্পর্কে তারা মিথ্যাচার করছে….।’’(সূরা ইউনুসঃ ৩৭-৩৯)ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচারিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল- তাঁর সবকিছু পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া ও তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, তাঁর দেয়া সব সংবাদ সত্য বলে মেনে নেয়া এবং খেয়ালের বশবর্তী হয়ে যুক্তির খাতিরে তা প্রত্যাখ্যান না করা কিংবা কোন সংশয়ের কারণে তাতে সন্দেহ প্রকাশ না করা অথবা অন্য লোকদের মতামত ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্যাসকে তাঁর উপর প্রাধান্য না দেয়া।’’ [মাদারিজুস সালেকীন ২/৩৮৭]৪. তাঁর ইত্তেবা করা, আনুগত্য পোষণ ও তাঁর হিদায়াতের আলোকে পরিচালিত হওয়াঃ এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয় রাসূলুল্লাহর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, বিশেষ করে ঐ ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে।’’[সূরা আহযাবঃ ২১] ইমাম ইবনু কাসীর বলেন, ‘‘সকল কথা, কাজ ও অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে এ আয়াতটি একটি মৌলিক দলীল।’’ [তাফসীরুল কুরআনিল আযীম: ৩/৪৭৫]অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল আমি তো তোমাকে তাদের হেফাযতকারী রূপে প্রেরণ করিনি।’’ [সূরা নিসাঃ ৮০] ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহর এবং অনুসরণ কর রাসূলের; আর তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর তাদের। আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতণ্ডায় লিপ্ত হও, তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের (সমাধানের) দিকে ফিরে আস, যদি তোমরা ঈমান পোষণ করে থাক আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি। এটাই পরিণামের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও সুন্দরতম।’’ [সূরা নিসাঃ ৫৯] এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই অসংখ্য হাদীসে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছেন।৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের বিধান দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়াঃ আল্লাহ বলেছেন এভাবে, ‘‘তোমার রবের শপথ! কক্ষণও নয়, তারা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তারা তোমাকে নিজেদের মধ্যকার বাদানুবাদের ক্ষেত্রে হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নেয়, অতঃপর তুমি যে মিমাংসা করে দাও তাতে তাদের মনে কোন দ্বিধা তারা রাখে না এবং পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়।’’ [সূরা নিসাঃ ৬৫]ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘‘যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত থেকে বের হয়ে যায়, আল্লাহ নিজে তাঁর পবিত্র সত্ত্বার কসম করে বলেছেন যে, তারা ঈমানদার নয়।’’ [মাজমু আল ফাতাওয়া ২৮/৪৭১]৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়াঃ আল্লাহ বলেন, ‘‘যে সকল দরিদ্র মুহাজিরকে তার বাসস্থান ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত করা হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে, তারাই হল সত্যবাদী।’’[সূরা হাশরঃ ৮]৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করার আরেকটি উপায় হল তাঁর প্রিয় সাহাবাদেরকে ভালোবাসা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়া, তাদেরকে আমাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ ও তাদের সুন্নাতের অনুসরণ করা। ৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের প্রচার ও প্রসার করা তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণের অন্যতম একটি উপায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসার তাওফীক দিয়ে আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করে দেন। আমীন।
১. সকল মানবের উপর রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়াঃ
সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ ইসমাঈলের সন্তান থেকে কিনানাকে চয়ন করেছেন এবং কিনানা থেকে কুরাইশকে নির্বাচন করেচেন। আর কুরাইশ থেকে চয়ন করেছেন বনু হাশিমকে এবং আমাকে চয়ন করেছেন বনু হাশিম থেকে।’’[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭৭]
সহীহ মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি আদম সন্তানের নেতা এবং এতে কোন অহংকার নেই। আর আমি ঐ ব্যক্তি প্রথম যার কবর বিদীর্ণ হবে, প্রথম যিনি শাফা‘আতকারী হবে এবং প্রথম যার শাফা‘আত কবুল করা হবে।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের আকীদা, মনে-মগজে ধারণ করার অর্থই হল তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্ভ্রম পোষণ করা এবং তাকে যাবতীয় সম্মান ও মর্যাদা দেয়া।
২. সকল ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আদব ও শিষ্টাচার রক্ষা করাঃ নিম্ন বর্ণিত রূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচার রক্ষা করা যায়।
ক. আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর উপর সালাত পেশ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার উপর সালাত ও সালাম পেশ কর।’’[সূরা আহযাবঃ ৫৬]
খ. আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা একে অপরকে যেভাবে ডাক, রাসূলকে তোমাদের মধ্যে সেভাবে আহবান করো না।’’ [সূরা নূরঃ ৬৩]
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে প্রতিপন্ন করাঃ
তাঁর সত্যতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘‘শপথ তারকার, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভ্রষ্ট হননি এবং বিভ্রান্তও হননি। তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করেননি। এতো শুধুই ওহী, যা তাঁর কাছে প্রেরিত হয়।’’ (সূরা নাজমঃ ১-৪)
আল্লাহ বলেন, ‘‘আর এ কুরআন তো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো থেকে রচিত নয়, বরং এ হচ্ছে তার পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং সে গ্রন্থের বিশদ বিবরণ যা রাববুল আলামীনের পক্ষ থেকে সন্দেহাতীতভাবে অবতীর্ণ। তারা কি বলে যে, সে তা রচনা করেছে? বল, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে এস এবং তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। বরং যে জ্ঞান তাদের আয়ত্বে নেই সে সম্পর্কে তারা মিথ্যাচার করছে….।’’(সূরা ইউনুসঃ ৩৭-৩৯)
ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচারিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল- তাঁর সবকিছু পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া ও তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, তাঁর দেয়া সব সংবাদ সত্য বলে মেনে নেয়া এবং খেয়ালের বশবর্তী হয়ে যুক্তির খাতিরে তা প্রত্যাখ্যান না করা কিংবা কোন সংশয়ের কারণে তাতে সন্দেহ প্রকাশ না করা অথবা অন্য লোকদের মতামত ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্যাসকে তাঁর উপর প্রাধান্য না দেয়া।’’ [মাদারিজুস সালেকীন ২/৩৮৭]
৪. তাঁর ইত্তেবা করা, আনুগত্য পোষণ ও তাঁর হিদায়াতের আলোকে পরিচালিত হওয়াঃ এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয় রাসূলুল্লাহর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, বিশেষ করে ঐ ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে।’’[সূরা আহযাবঃ ২১]
ইমাম ইবনু কাসীর বলেন, ‘‘সকল কথা, কাজ ও অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে এ আয়াতটি একটি মৌলিক দলীল।’’ [তাফসীরুল কুরআনিল আযীম: ৩/৪৭৫]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল আমি তো তোমাকে তাদের হেফাযতকারী রূপে প্রেরণ করিনি।’’ [সূরা নিসাঃ ৮০]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহর এবং অনুসরণ কর রাসূলের; আর তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর তাদের। আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতণ্ডায় লিপ্ত হও, তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের (সমাধানের) দিকে ফিরে আস, যদি তোমরা ঈমান পোষণ করে থাক আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি। এটাই পরিণামের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও সুন্দরতম।’’ [সূরা নিসাঃ ৫৯]
এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই অসংখ্য হাদীসে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছেন।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের বিধান দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়াঃ
আল্লাহ বলেছেন এভাবে, ‘‘তোমার রবের শপথ! কক্ষণও নয়, তারা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তারা তোমাকে নিজেদের মধ্যকার বাদানুবাদের ক্ষেত্রে হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নেয়, অতঃপর তুমি যে মিমাংসা করে দাও তাতে তাদের মনে কোন দ্বিধা তারা রাখে না এবং পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়।’’ [সূরা নিসাঃ ৬৫]
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘‘যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত থেকে বের হয়ে যায়, আল্লাহ নিজে তাঁর পবিত্র সত্ত্বার কসম করে বলেছেন যে, তারা ঈমানদার নয়।’’ [মাজমু আল ফাতাওয়া ২৮/৪৭১]
৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়াঃ
আল্লাহ বলেন, ‘‘যে সকল দরিদ্র মুহাজিরকে তার বাসস্থান ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত করা হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে, তারাই হল সত্যবাদী।’’[সূরা হাশরঃ ৮]
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করার আরেকটি উপায় হল তাঁর প্রিয় সাহাবাদেরকে ভালোবাসা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়া, তাদেরকে আমাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ ও তাদের সুন্নাতের অনুসরণ করা।
৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের প্রচার ও প্রসার করা তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণের অন্যতম একটি উপায়।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসার তাওফীক দিয়ে আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করে দেন। আমীন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে ভালবাসা ইমানের পূর্বশর্তঃ
Reviewed by মইনীয়া যুব ফোরাম
on
8:59 PM
Rating:
No comments: