ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ ২২, ২৩,২৪
লেখকঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাহাদুর
Edited by (Masum Billah Sunny)
-“যাদের প্রতি আপনাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্যে আমি আপনাকে ‘শাহিদ' (হাযির-নাযির) করে পাঠিয়েছি।
প্ৰিয় নবী উন্মতের (দ.) কে নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলীর সাক্ষী বানানো হয়েছে
(১) অবস্থাসমূহ পর্যবেক্ষণ করা
(২) তাদের আমলসমূহ প্রত্যক্ষ করা
(৩) তাদের সত্যায়ন ও মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করার সাক্ষ্য প্রদান
(৪) তাদের হেদায়াত ও গোমরাহী সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান। এসব বিষয়ে তিনিই কিয়ামতে সাক্ষ্য প্রদান করবেন।
★ আলুসীঃ রুহুল মায়ানী, ১১/২২২পৃ. আবুস সাউদ, তাফসীরে আবু-সাউদ, ৭/১০৭-১০৮পৃ.
আল্লামা যামাখশারী বলেন-
“যাদের প্রতি আপনাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্যে আমি আপনাকে শাহিদ' (হাযির-নাযির) করে পাঠিয়েছি এবং আপনি তাদের সত্যায়ন ও মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করার সাক্ষ্য প্রদান করবেন।
(তফসীরে কাশশাফ, ৩/৫৪৬পৃ.)
★ ইমাম কাযি নাসিরুদ্দীন বায়যাভী (রহ)ও অনুরূপ বলেছেন।
(বায়যাভী,তাফসীরে বায়যাভী৪/২৩৪পৃ)
★ ইমাম নাসাফী (রহ)ও অনুরূপ তার তাফসীরে
বলেছেন। (তাফসীরে নাসাফী, ৩/৩৬পৃ. দারুল কালামুল তৈয়্যব, বয়রুত, লেবানন,
প্রকাশ, ১৪১৯হি.)
★ ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী (রহ.)ও অনুরূপ তার তাফসীরে বলেছেন।
(তাফসিরে বাহারুল মুহিত, ৮/৪৮৭পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত লেবানন, প্রকাশ, ১৪২০হি)
★ আল্লামা আহমদ বিন মুস্তফা আল-মারাগী (রহ) বলেন,
“যাদের প্রতি আপনাকে রাসূল করে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্যে আমি আপনাকে ‘শাহিদ' (হাযির-নাযির) করে পাঠিয়েছি; তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং আমলসহ অবলোকন করবেন।"
(তাফসীরে মারাগী, ২২/১৯পৃ)
উপরে বর্ণিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি যাদের প্রতি প্রেরিত, তিনি তাঁদের জন্য হাযির ও নাযির । তিনি উম্মতের যাবতীয় বিষয়
প্রত্যক্ষ না করলে কিভাবে সাক্ষ্য প্রদান করবেন। আর তিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতি
প্রেরিত। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন- “আমি সকল সৃষ্টির জন্য প্রেরিত হয়েছি ।"
★ মুসনাদে আহমদ, ১৫/৯৫পৃ. হাদিস, ৯৩৩৭,
★ মুয়াসাতুর রিসালা, বয়রুতলেবানন, সহিহ মুসলিম, হাদিস ঃ ৫২৩
আয়াতে উল্লেখিত (শাহিদ) শব্দের অর্থ সাক্ষীও হতে পারে এবং ‘হাযির-নাযির' ও হতে পারে সাক্ষী অর্থে।
শাহিদ' শব্দটি এজন্য ব্যবহৃত হয় যে, সে ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। যেমন পবিত্র
কোরআনে 'শাহেদ’ শব্দের ব্যবহার দেখুন
ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ
শুনা মোক৷ ২৩
পবিত্র কোরআনের অন্য স্থানে
দেখুন-
★ তোমরা যে কাৰ্য কর, আমি তোমাদের কাছে
হাজির ও উপস্থিত থাকি।" (সুরা ইউনুস, আয়াত, নং ৬১)
★ "আল্লাহ সব বিষয় প্রত্যক্ষকারী।” (সুরা আলে
ইমরান, ৩৩)
পবিত্র কুরআনের অন্যস্থানে দেখুন মহান রব বলেছেন -
★ “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা রমযান মাসে উপস্থিত থাকবে তারা যেন এই মাসে রোযা রাখে । (সুরা বাকারা, আয়াত, ১৮৫)
একটি হাদিসে পাকে দেখুন-
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন,
-“যে ব্যক্তি জানাযার নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকল তার জন্য রয়েছে এক
কিরআত সাওয়াব।"
★ ইমাম বুখারী আস সহিহ, ২/৮৭পৃ. হাদিস নং ১৩২৫,
★ মুসলিম, আস-সহিহ, ২৬৫২পৃ. হাদিস নং ৯৪৫,
★ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, আল মুসনাদ, ১৫/১১৪পৃ. হাদিস নং ৯২০৮,
★ ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানিল কোবরা
২১৩৩,
★ ইবনে হিব্বান, আস-সহিহ, ৭/৩৪৭পৃ. হাদিস নং ৩০৭৮
আমরা জানাযার নামাযে পড়ে থাকি-
হযরত আবু ইবরাহিম আল আনসারী (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জানাযার নামাযে এ দোয়া পড়তে শুনেছেন,
-“হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করুন আমাদের জীবিতদের ও আমাদের মৃতদের এবং
আমাদের উপস্থিতদের ও আমাদের অনুপস্থিতদের. .... "
★ তিরমিযি, আস সুনান, হাদিস নং ১০২৪, তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে।
★ নাসাঈ, আস-সুনানিল কোবরা২/৪৪৭পৃ. হাদিস নও২১২৪, ও ৯/৩৯৭পৃ. হাদিস নং ১০৮৫৬,
★ নাসাঈ, আস সুনান, ৪৭৪পৃ.
হাদিস নং ১৯৮৬,
★ ইবনে মাযাহ, আলু-সুনান, ১/৪৮০পৃ. হাদিস নং ১৪৯৮
আমি বিরোদ্ধবাদীদের বলবো এই দুই হাদিসে 'শাহেদ' শব্দের অর্থ কী হবে?
-“(২) নবি মুমিনদের প্রাণের চেয়েও অধিক নিকটে ।”
★ সুরা আহযাব আয়াত নং ৬
দেওবন্দ মাদ্রাসার কথিত
প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতভী বলেন- আলোচ্য আয়াতে শব্দটির অর্থ হলো
অধিক নিকটবর্তী ।
★ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন,
-“কিয়ামতের দিনে সেই ব্যক্তি আমার অতি নিকটে থাকবে যে আমার প্রতি অধিক দুরুদ পড়েছে।
Reference :
★ আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২০৭পৃ. হাদিস,৩০৬, ও ৬৩২৫. হাদিস,৩১৭৮৭,
★ তিরমিযী আস-সুনান : ২/৫৪ পৃ: হাদিস : ৪৮৪,
★ ইবনে হিব্বান : আসূ-সহিহ : ৩/১৯২ পৃ. হাদিস : ৯১১,
★ ইমাম দারেকুতনী : আল ইলুল : ২৪১ পৃ.
★ বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা ঃ ৩/২৪৯পৃ. হাদিস : ৫৭৯১
★ বায়হাকী : শু'আবুল ঈমান : ৩/১২৯ পৃ. হাদিস :১৪৬২,
★ ইমাম আবু ইয়ালা : আল-মুসনাদ : ৮/৪২৮ ,
হাদিস : ৫০১১,
★ ইমাম মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/৩২৭ পৃ. হাদিস : ২৫৭৫,
★ খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১১৮ পৃ. হাদিস : ৯২৩,
★ হাকিম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ২/৪২১ পৃ.
★ ইমাম বাগৰী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৭পৃ. হাদিস,৬৮৬,
★ মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯পৃ. হাদিস,২১৫১
এ হাদিসের অর্থ সকলেই নিকটে অর্থ করে থাকেন। যেমন এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা ।
আলী কারী (রহ) বলেন-“এখানে
আওলা অর্থ নিকটে।
★ মোল্লা আলী কারী, মেরকাত, ২/৭৪৩পৃ. হাদিস নং ৯২৩
ইমাম তিরমিযি (রহ) হাদসটিকে ‘হাসান' ও ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন ।
★ তাহীরুন্নাস, পৃ. ১০, স্কৃত: মাওলানা কাসেম নানুতন্তীকুতুবখানা রহীমিয়াদেওবন্দ কর্তৃকপ্রকাশিত
(৩)-“এবং কথা হলো এই যে আমি (আল্লাহ তা'য়ালা) তোমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মদী
কে) সমস্ত উম্মতগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছি, যাতে তোমরা অন্যান্য
লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করতে পার এবং এ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে।
ওয়াসাল্লাম) তোমাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী ও সাক্ষীরূপে প্রতিভাত হন ।
★ সূরা ঃ বাকারা ও আয়াত : ১৪৩,
(৪)-“তখন কি অবস্থা হবে, যখন আমি (আল্লাহ তায়ালা) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব, এবং হে মাহবুব! আপনাকে সে সমস্ত সাক্ষীদের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরূপে আনয়ন করবো।
★ সূরা ঃ নিসা, আয়াত : ৪১, পারা ৫৫
(৫)-নিশ্চয় তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে সে রাসূলই এসেছেন, যাঁর কাছে তোমাদের কষ্টে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারটি বেদনাদায়ক "
★ সূরা ঃ তাওবাহ, আয়াত : ১২৮, পারা ঃ ১১
বুঝতে পারলাম যে হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিটি কাজকর্ম সম্পর্কে
অবগত বলেই আমাদের দুঃখে তিনি দুঃখিত হন।
No comments: