গল্পটা কোরআনের-০৪

হুদহুদ পাখি 'সাবা' রাজ্য থেকে ফিরল। এসে সে সায়্যিদুনা সুলায়মান আলাইহিস সালামকে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করল।

তারা সূর্যের পূজা করছে এবং তাদের রাণী বিলকিস এর নিকট এক বিরাট সিংহাসন থাকার কথা জানাল। সুলায়মান আলাইহিস সালাম হুদহুদ পাখির কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রাণী বিলকিসকে একটি চিঠি লিখে পাঠালেন। নিজ আনুগত্য স্বীকার করে নিতে বার্তা দিলেন। রাণী তার উজিরদের সাথে পরামর্শ করে, অনেক উপহার সামগ্রী পাঠালেন যাতে বুঝা যায় তিনি কোনো বাদশাহ নাকি আল্লাহর পবিত্র নবী।

রাণীকে দাওয়াত করা হলো। নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ স্বরুপ, সুলায়মান আলাইহিস সালাম রাণী বিলকিস এর সিংহাসন তার আগমনের পূর্বেই নিয়ে আসার পরিকল্পনা করলেন। সেই সিংহাসন আনার জন্য তিনি নিজ দরবারে ঘোষণা করলেন, কে আছো যে কি-না এই সিংহাসনটি দ্রুততম সময়ে নিয়ে আসতে পারবে? এক জ্বীন বলল: আমি পারব। এবং আমি এই সভা শেষ হওয়ার পূর্বেই সিংহাসন উপস্থিত করব। আমি খুবই শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত। সুলায়মান আলাইহিস সালাম বললেন- না! আমার আরো দ্রুত চাই। তখন তাঁর এক উজির আসিফ বিন বরখিয়া যে কি-না বনী ঈসরায়িল এর আল্লাহর ওলী ছিল এবং যার কাছে যাবুরের তথা কিতাবুল্লাহ'র ইলম ছিল, সে বলল- 'আমি নিয়ে আসব এবং তাও চোখের পলক ফেলার আগে।' আল্লাহু আকবার।

এবং আশ্চর্যজনকভাবে এটাই হলো। তিনি কয়েক মূহুর্তের মধ্যে সেই সিংহাসন এনে হাজির করে দিলেন। হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করলেন এবং বললেন— এটা আমার রবেরই অনুগ্রহ যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ কি-না? কোরআনে পাকে সূরা নামলের ২০-৪০ নং আয়াতে এই ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে।

قَالَ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَيُّكُمْ يَأْتِينِي بِعَرْشِهَا قَبْلَ أَنْ يَأْتُونِي مُسْلِمِينَ
قَالَ عِفْرِيتٌ مِنَ الْجِنِّ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ تَقُومَ مِنْ مَقَامِكَ ۖ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ
قَالَ الَّذِي عِنْدَهُ عِلْمٌ مِنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِنْدَهُ قَالَ هَٰذَا مِنْ فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَنْ شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ

'সুলায়মান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্নসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে বিলকীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে? জনৈক দৈত্য-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিমান, বিশ্বস্ত। কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল- আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব।

অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল।' [সূরা নামল, আয়াতঃ ৩৮-৪০]

এই ঘটনা এর উজ্জ্বল প্রমাণ যে, আল্লাহ ওয়ালাদের কারামত সত্য। এবং ক্ষেত্রবিশেষে আল্লাহ চাইলে তাদের কারামত প্রকাশও হতে পারে। তাছাড়া জ্বীনের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায় এই ঘটনা থেকে। এবং তাও জানা যায়, যে জ্বীন জাতি মানুষের চেয়ে অনেকাংশে বেশি শক্তিশালী। কিন্তু আল্লাহু আকবার! আল্লাহর ওলীগণ সেই জ্বীনজাতির চেয়েও বেশি ক্ষমতা প্রদত্ত হোন আল্লাহর পক্ষ হতে। আর বনী ঈসরায়েলের ওলীদের যদি এই ক্ষমতা হয়, তবে মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের ওলীদের ক্ষমতার পর্যায় কেমন হতে পারে?

'ইয়ে শান হে খিদমাতগারো কি, সারকার কা আলাম কিয়া হোগা।'

আমাদের চোখে এমনও মুসলমান দেখি, যারা কোনো আউলিয়া কেরামের কারামতের বয়ান শুনলে সরাসরি ভণ্ডামির ফতোয়া দিয়ে দেয়। আসলে ওরা অবুঝ। কিতাবুল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ। এমনটা মোটেও উচিত নয়, যেহেতু আল্লাহর কিতাব এর পক্ষে প্রমাণ বহন করে। তারপর আমরা এই ঘটনায় লক্ষ্য করেছি, সুলায়মান আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে সাথে-সাথেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন। হ্যা, এটা করা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণের পদ্ধতি। আমাদেরও উচিত রব তায়ালার পক্ষ থেকে আসা নিয়ামতের বেশি থেকে বেশি শুকরিয়া আদায় করা। খুশি উদযাপন করা। যেন আমরাও তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।

আজকে আমরা দুনিয়ার সাফল্য অর্জনের পেছনে ব্যয় করছি প্রতিটা মূহুর্ত। আসুন না! আমি আপনাকে এমন একটি পদ্ধতি বলে দেই— যেটা না শুধু দুনিয়া বরং আখিরাতেও আপনাকে সফলতা এনে দিবে। যে দুনিয়ার পিছনে পাগলের মতো ছুটছেন, সে দুনিয়া আপনার পায়ের নিচে চলে আসবে। আর সেই টিপসটা হলো— আপনি আল্লাহর হয়ে যান। আল্লাহর প্রিয় হওয়ার চেষ্টায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যান। যদি রব তায়ালা একবার প্রিয় বান্দাদের তালিকায় নাম তুলে দেন, তখন এই দুনিয়া আপনার গোলাম হয়ে যাবে। যেটা আপনি চান, সেটাই পাবেন। দুনিয়ার বাদশাহী আপনার নিকটে চলে আসবে।

আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, অনেক অসাধ্যকেও সাধন করতে তখন আপনি সক্ষম হবেন, যা সাধারণ মানুষ করতে অক্ষম। এই ঘটনা এটাই শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। আসুন আমরা রব তায়ালা প্রিয় হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত থাকি। তাঁর নাফরমানি থেকে বিরত থাকি। ইনশাআল্লাহ, তিনি চাইলে আমাদেরকে প্রাচুর্যতায় ভরপুর করে দিবেন।

'গল্পটা কোরআনের- ০৪'
__স্বাধীন আহমেদ
গল্পটা কোরআনের-০৪ গল্পটা কোরআনের-০৪ Reviewed by মইনীয়া যুব ফোরাম on 9:17 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.