গল্পটা কোরআনের-০২

সাগরের তীরে পরে আছে এক মৃত লাশ। পানির জোয়ার-ভাটায় ওপর নিচ হচ্ছে। যখন পানি লাশের ওপরে আসে, তখন কিছু মাছ এসে মৃতের শরীর থেকে মাংস খায়। যখন পানি নেমে যায় তো, কিছু হিংস্র পশু এসে খায়। আর তারা চলে গেলে সুযোগ আসতো পাখিদের। তারা এসে খেয়ে যেত মৃতের শরীর থেকে মাংস ছিড়ে।

এই সম্পূর্ণ দৃশ্যটি দেখছিলেন— আল্লাহর খলীল সায়্যিদুনা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম। তিনি নিজের চোখে দেখার ইচ্ছে পোষণ করলেন, কিভাবে আল্লাহ তায়ালা এই মৃতকে আবার পুনরুজ্জীবিত করবেন। যার মাংসের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, না হয় পশু পাখির খাদ্যে পরিণত হয়েছে। হযরত সা'দ বিন জুবাইর রাযিআল্লাহু আনহু বলেন— আল্লাহ যখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে খলীল হিসেবে মনোনীত করে নিলেন, তখন হযরত আজরাইল আলাইহিস সালাম এই খবর নিয়ে আসলেন ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কাছে।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন— এর আলামত কি? হযরত আজরাইল আলাইহি সালাম বললেন— আল্লাহ আপনার চাহিদা পূরণ করবেন এবং আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী মৃতকে জীবিত করবেন। [১]

তো সেই প্রেক্ষিতে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম দোয়া করলেন— আল্লাহ আমি তো তোমার কুদরতে বিশ্বাসী। তবে আমি নিজের চোখে দেখতে চাই কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত করো। নিজের হৃদয়কে প্রশান্ত করতে চাই। এবং আমি খলীল হওয়ার প্রমাণটাও দেখে নিতে চাই। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর আবেদনে রাব্বে কারীম থেকে আদেশ আসল— চারটি পাখি নিন। এদেরকে জবাই করুন। তারপর এদের মাংসগুলোকে একটি অপরটির সাথে মিশ্রণ করে কিমা বানিয়ে পাহাড়ের ওপর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন। তারপর তাদেরকে ডাকুন। তারা জীবিত হয়ে আপনার নিকট ফিরে আসবে! এক বর্ণনা অনুযায়ী চারটি পাখি ছিল— ময়ূর, কবুতর, কাক এবং মোরগ।

ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ঠিক এমনটাই করলেন। পাখির মাথাগুলো নিজের কাছে রেখে দিলেন। তারপর যখন সেগুলোর নাম ধরে ডাকলেন— তখন পাখিগুলোর মাংস জড়ো হয়ে পুনরায় শরীর গঠন হয়ে জীবিত হয়ে গেলো। তারপর দৌড়ে এসে নিজেদের মাথাগুলোর সাথে পুনঃ জোড়া লেগে গেল। [২] আল্লাহু আকবার।

কোরআনে পাকে সূরা বাকারা'র ২৬০ নং আয়াতে ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত আছে—

'আর যখন আরয করল ইব্রাহিম, 'হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখিয়ে দাও কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত করবে।' ইরশাদ হলো: তোমার কি নিশ্চিত বিশ্বাস নেই? আরয করল: নিশ্চিত বিশ্বাস কেন থাকবে না? তবে আমি চাই যে আমার অন্তরে প্রশান্তি এসে যাক। ইরশাদ করলেন: তবে আচ্ছা। চারটি পাখি নিয়ে তোমার সাথে নেড়েচেড়ে নাও। তারপর এগুলোর এক এক খন্ড প্রতি পাহাড়ের ওপর রেখে দাও, তারপর সেগুলোকে আহ্বান কর, সেগুলোর তোমার নিকট চলে আসবে নিজ পায়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে।'

আব্দুল মুস্তফা আযমী রাহিমাহুল্লাহ বলেন— প্রমাণিত হয়ে গেলাে যে, মৃতদের ডাকা শিরিক নয় কেননা যেহেতু মৃত পাখিদেরকে আল্লাহ পাক ডাকার আদেশ দিয়েছেন এবং একজন জলিলুল কদর পয়গাম্বর এই মৃত পাখিদের ডাকলেন, সেহেতু এটি কখনােই শিরিক হতে পারে না। কেননা আল্লাহ পাক কখনােই কোন শিরিকের আদেশ দিবেন না আর কোন নবীই কখনােই কোন শিরিকের কাজ করতে পারেন না। আর যেহেতু মৃত পাখিদের ডাকা শিরিক নয়, সেহেতু আল্লাহ পাকের অলী এবং শহীদদের ডাকা কিভাবে শিরিক হতে পারে! যারা অলী এবং শহীদদের ডাকাকে শিরিক বলে ইয়া গাউস শ্লোগান প্রদানকারীদেরকে মুশরিক বলে, তাদের কিছুক্ষণ মাথা নত করে ভাবা উচিৎ।

আর এই কোরআনী ঘটনার আলােকে তাদের হিদায়তের নূর দৃশ্যমান হবে আর তারা আহলে সুন্নাতের পদ্ধতিতে সীরাতুল মুস্তাকীমের মহা সড়কে চলে আসবে। [৩]

আত্মশুদ্ধি:
তিনি আরাে বলেন— হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যে চারটি পাখি জবাই করেছেন, তাদের মধ্যে প্রত্যেকের একটি খারাপ আচরণ প্রসিদ্ধ রয়েছে। যেমন: ময়ূর নিজের আকার আকৃতির সৌন্দর্যে খুবই গর্ব করে থাকে এবং মােরগের মাঝে অধিকহারে কামভাবের মন্দ স্বভাব রয়েছে, কাঁকের লোভের মন্দ অভ্যাস রয়েছে আর কবুতরের মাঝে নিজের উচ্চ উড়ানের জন্য গর্ব থাকে। এই চারটি পাখিকে জবাই করাতে এই চারটি স্বভাবকে জবাই করার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, চারটি পাখি জবাই করা হলেই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম মৃতকে জীবিত করার দৃশ্য দেখলেন এবং তাঁর অন্তরে প্রশান্তির নূরের বিচ্ছুরণ হয়েছে।

তবে যে ব্যক্তি এটা চায় যে— তার অন্তর জীবিত হয়ে যাক এবং তার প্রশান্তিময় হৃদয়ের দৌলত নসীব হয়ে যাক, তবে তার উচিৎ যে— মােরগ জবাই করা অর্থাৎ নিজের কামভাবের উপর ছুরি চালিয়ে দেয়া এবং ময়ূর জবাই করা অর্থাৎ নিজের আকার আকৃতি এবং পােশাকের অহঙ্কারকে জবাই করে দেওয়া, আর কাক জবাই করা অর্থাৎ লােভ ও লালসার গলা কেটে দেয়া, কবুতর জবাই করা অর্থাৎ নিজের উচ্চ মান এবং উচ্চ মর্যাদার গর্ব ও দাম্ভিকতার উপর ছুরি চালিয়ে দেওয়া। [৪]

যদি কেউ এই চারটি মন্দ অভ্যাসকে জবাই করে তাহলে তার হৃদয়ে প্রশান্তির সূর্য উদয় হওয়াকে সে অবলোকন করতে পারবে। ইনশাআল্লাহ।

Reference:
[১] তাফসীরে খাযিন।
[২] তাফসীরে করতুবী।
[৩] আজায়িবুল কোরআন ও গারায়িবুল কোরআন, ৫৮ পৃষ্ঠা।
[৪] আজায়িবুল কোরআন ও গারায়িবুল কোরআন, ৫৯ পৃষ্ঠা।

'গল্পটা কোরআনের- ০২'
-স্বাধীন আহমেদ
গল্পটা কোরআনের-০২ গল্পটা কোরআনের-০২ Reviewed by মইনীয়া যুব ফোরাম on 9:05 PM Rating: 5

Post Comments

No comments:

Powered by Blogger.